রিপাবলিক ডেস্ক:
ফেলানী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যেই ফেলানী হত্যার বিচার করতে হবে। সীমান্তের কাঁটাতারে কি ফেলানী ঝুলে ছিল? না সেখানে সমগ্র বাংলাদেশ ঝুলেছিল।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার সংগঠকদের উপস্থিতিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের যেন আগামী বছর এমন বিক্ষোভ সমাবেশে ফেলানীর জন্য আর দাঁড়াতে না হয়, সেজন্য বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের কাজে এ বিষয়ে দোষীদের বিচার করার দাবি জানাচ্ছি। বক্তারা বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকারী ভারতের আগ্রাসন ও ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার চাই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তারা বলেন, ‘আমরা যদি আত্মতৃপ্তিতে ভুগী, তাহলে আমরা ভুল করছি। আমরা ফেলানী হত্যার বিচার চাই।
ফেলানীকে হত্যা করা হয়েছে তা আমরা জানি। শুধু ফেলানীকে না এরপরেও সীমান্তে এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ থামেনি। এখনো সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ চলছে।’ তারা আরো বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বলতে চাই, আপনারা যেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চান তা থেকে সরে দাঁড়ান।
বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আপনারা ভালো হয়ে যান। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রভুত্ব কায়েম করে আপনাদেরকে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তা আর চলবে না।’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তে বিগত ১৬ বছরে ছয় শতাধিক মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা দেখেছি সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো সীমান্ত হত্যার ভিকটিম বিচার পায়নি। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাব যে, আন্তর্জাতিক পরিসরে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ যেন নেওয়া হয়। সেই সাথে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেসব অসম ও অন্যায্য চুক্তি হয়েছে, সেই অন্যায্য ও বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো যেন বাতিল করা হয়।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘একই সাথে আমরা ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, অতিসত্বর যেন খুনি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হাজারো ফুলের খুনি শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন কমিটির সংগঠক মশিউর রহমান নাসির উদ্দিন ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবের কুঠি এলাকায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা ফেলানী খাতুন নামের ১৪ বছরের এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করে। ফেলানীর লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল।
বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ানদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। বিএসএফ নিজস্ব আদালতে এ ঘটনার জন্য দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
বাবার সঙ্গে ফেলানী নয়াদিল্লীতে গৃহকর্মীর কাজ করত। তার বাবা তাকে দেশে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন। তার পিতার সাথে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার মই বেয়ে পার হওয়ার সময় তার পরনের কাপড় কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে যায়। ভয় পেয়ে ফেলানী চিৎকার দিলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বিএসএফ সদর দপ্তর ‘জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট’ গঠন করে এবং আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের দুইজন সাক্ষী, একজন আইনজীবী ও বিজিবির একজন প্রতিনিধিকে ভারতে যেতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী ফেলানীর বাবা মো. নূরুল ইসলাম ও মামা মো. আব্দুল হানিফসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুড়িগ্রামের ৪৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ ও কুড়িগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিসকিউটর আব্রাহাম লিংকনকে ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়।