গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর বাড়ানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল হাজার হাজার রিজার্ভ সেনার তলব করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো গতকাল শনিবার এ খবর জানিয়েছে। এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারকে নিয়ে কঠোর মন্তব্যও করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
বিভিন্ন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে রিজার্ভ বাহিনীকে তলবের আদেশ পাঠাতে শুরু করেছে।
মূলত নিয়মিত সেনা ও পশ্চিম তীরে কর্মরত সদস্যদের গাজায় মোতায়েনের জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য নিশ্চিত বা অস্বীকার করা হয়নি।
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে, রবিবার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে গাজায় অভিযান বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাসের আক্রমণের পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছিল, যা মার্চের মাঝামাঝি আবারও স্থবিরতায় পড়ে।
এরপর ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় পরিসরে সামরিক অভিযান আবার শুরু করে ইসরায়েল।
এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী ছিল কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর। কাতারে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় থাকায় দেশটি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নতুন চুক্তি প্রক্রিয়া কার্যত স্থগিত হয়ে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু বলেন, কাতার ‘উভয় দিকেই খেলা খেলছে’। তারা ‘সভ্যতা না কি বর্বরতার পক্ষে’ তা নির্ধারণ করা উচিত। এই মন্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন তিনি। তবে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ন্যূনতম মানদণ্ডেরও বাইরে।’
একই সময়ে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রয়েছে গত ২ মার্চ থেকে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এটিকে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা হিসেবে দেখছে।
জিম্মি ভিডিও প্রকাশ, শিশুদের মৃত্যুতে শোক
শনিবার হামাস গাজায় আটক এক আহত ইসরায়েলি-রাশিয়ান জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মাসিম হারকিন নামের ব্যক্তি মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় রয়েছেন। ভিডিওতে তিনি হিব্রু ভাষায় কথা বলেন এবং ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত হওয়ার ইঙ্গিত দেন।
গাজা পরিচালনাকারী হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ২ হাজার ৩৯৬ জন নিহত হয়েছেন। আর পুরো যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৯৫ জনে পৌঁছেছে। বর্তমানে হামাসের হাতে আরো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
তেলআবিবে বিক্ষোভ, গাজায় শিশুহত্যা নিয়ে শোক
শনিবার তেলআবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। ৬৪ বছর বয়সী আরোনা মাসকিল বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি কারণ আমরা জিম্মিদের ঘরে ফেরাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি না যে বর্তমানে গাজায় যুদ্ধের কোনো ন্যায্যতা আছে।’
ইসরায়েল সরকার বলছে, তারা জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এতে বরং জিম্মিরা আরো বিপদের মুখে পড়ছেন। এদিকে শনিবার রাত ৩টায় খান ইউনিস শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক পরিবারের ১১ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু—দুই জন এক বছরের এবং একজন এক মাস বয়সী।
সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, বায়রাম পরিবারের বাড়িতে হামলায় সবাই নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা হামাসের এক সদস্যকে লক্ষ্য করেই অভিযান চালিয়েছে।
সূত্র : এএফপি