যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা ট্রিম ফেডের নেশা সাপ নিয়ে কাজ করা। প্রায় দুই দশক ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে ২০০ বারের বেশি সাপের ছোবল খেয়েছেন তিনি। গোখরাসহ বিশ্বের ভয়ংকর নানা সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নিয়েছেন ৭০০ বারের বেশি। এবার তার রক্ত থেকে তৈরি হচ্ছে ‘অতুলনীয়’ অ্যান্টিভেনম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিম ফ্রিডের রক্তে এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক ধরনের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। খবর বিবিসির।
টিমের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই অ্যান্টিবডি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে সাপের বিষের মারাত্মক ডোজ থেকে রক্ষা করেছে।
বিশ্বে প্রতিবছর ১৪ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করে। এর তিন গুণ বেশি মানুষ এই সাপের কামড়ে অঙ্গচ্ছেদ বা চিরতরে অক্ষম হয়ে পড়ে।
এ সময় ট্রাক মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন ফ্রেড। তবে সাপ নিয়ে কাজ করা ছিল তাঁর নেশা।
শুরুতে সাপ ধরার সময় নিজেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছিলেন।
এ লক্ষ্য থেকে সাপের ছোবল খাওয়া শুরু করেন তিনি। তবে এই কাজ করতে গিয়ে শুরুতেই মরে যেতে বসেছিলেন তিনি। ফ্রিড বলেন, পর পর দুটি কেউটের কামড় খেয়ে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন। ফ্রিড বলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল বিশ্বের মানুষের জন্য সাপের কামড়ের ভালো চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন করা।
তিনি বলেন, সাপের কামড় খাওয়া তাঁর জীবনযাত্রার অংশ হয়ে গেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক কিছু সাপ যেমন একাধিক প্রজাতির মাম্বা, কোবরা, তাইপান ও ক্রেইটের মতো সাপ থেকে ফ্রেড বিষ সংগ্রহ করেছেন। সেন্টিভ্যাক্স বায়োটেকের প্রধান বিজ্ঞানী ড. জ্যাকব গ্লানভিল বলেন, ‘আমরা টিমের রক্ত থেকে দুই ধরনের বিস্তৃত অ্যান্টিবডি পেয়েছি, যেগুলো নিউরোটক্সিনকে লক্ষ্য করে। এর সঙ্গে একটি তৃতীয় উপাদান যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে একটি কার্যকর অ্যান্টিভেনম ককটেল।’
লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ক গবেষণা ও চিকিৎসা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিক কেসওয়েল বলেছেন, এই গবেষণায় সাপের কামড় থেকে সুরক্ষা পাওয়ার যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা মানুষের জন্য অনেক উপকারী হবে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এখনো অনেক কাজ বাকি আছে এবং এই অ্যান্টিভেনম মানুষের ওপর ব্যবহারের আগে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।